welcome to skitto forum
a place for all things skitto

Vuttttttttttt story......

rahatsardarby: rahatsardar
November 12, 2019 1:55PM
Member

হাত ঘড়িটার দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠলাম। রাত ১ টা বাজে। এখন যত দ্রুত সম্ভব আমায় বাসায় ফিরতে হবে। কারণ রাত ২ টার পর এ হসপিটালটা ভয়ংকর হয়ে উঠে। তখন পুরো হসপিটালে চলতে থাকে অশুভ শক্তির তাণ্ডব। আজ থেকে ১০ বছর আগে মেডিকেল পাশ করে রাজশাহির প্রত্যন্ত অঞ্চলের এ হসপিটালটায় চাকরি নিই আমি। অন্য সকল ডাক্তারদের মত আমিও কোনো কালেই ভূত-প্রেতে বিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু যেদিন আমি চাকরি নিয়ে এ হসপিটালটাতে আসি তার দু’দিন পর থেকেই লোকমুখে শুনতে থাকি রাত ২ টার দিকে নাকি এ হসপিটালটা ভয়ংকর হয়ে উঠে। কথাটার সত্যতা এখন পর্যন্ত যাচাই করতে পারেনি আমি। তাছাড়া রাতে এ হসপিটালে আর কেউ থাকে না। গত কয়েক মাস ধরে রোগির সংখ্যাও কমে গেছে। এ হসপিটালের ধার এখন কেউ ঘেষতে চায় না। সবার বক্তব্য রাতে এখানকার লাশগুলো সব জিন্দা হয়ে উঠে আর ভয়ংকরভাবে চেঁচামেচি করে। আরও একবার চিন্তা করলাম। আজ কি কথাটার সত্যতা যাচাই করব? কিন্তু এত রাতে এখানে একা থাকতে সায় দিচ্ছে না মন। তাই দ্বিতীয় বার আর চিন্তা না করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। এপ্রোনটা খুলে বেরিয়ে এলাম কেবিন থেকে। পুরো হসপিটালটা কেমন যেন নিস্তব্ধ। এতই শান্ত যে, যে কারোই রক্ত হিম করে দেবে। করিডর ধরে সামনে এগিয়ে চললাম। লাশ ঘরের সামনে এসেই একটা শব্দ পেয়ে থমকে দাঁড়াতে হল আমায়। শব্দটা মর্গের ভেতর থেকেই আসছে। অনেকটা কারও হাঁটার আওয়াজ। কিন্তু মর্গের ভেতর আবার কে হাঁটবে? ওখানে তো লাশ সব। মর্গের দরজার নিচে হঠাৎ করে চোখ যেতেই দেখি দরজার নিচ দিয়ে তাজা রক্ত বেরিয়ে আসছে। রক্তটা প্রথম দেখে চমকে উঠলেও পরবর্তীতে দ্রুত নিজেকে সামলে নিলাম। আজ একটা বেওয়ারিশ বয়স্ক লোকের লাশ এসেছে। একটা জঙ্গলে পেয়ে পুলিশ সেটা মর্গে নিয়ে আসে। হয়তো সে লাশ থেকেই রক্তটা আসছে। তাই ব্যাপারটা আর তেমন আমলে নিলাম না। দ্রুত হেঁটে হসপিটাল থেকে বাইরে চলে আসলাম।
চারদিকে শুনশান নীরবতা। অর্ধ চাঁদটা থেকে যে আলো পৃথিবীর উপর পড়ছে তাতে করে চারপাশটা কেমন রহস্যময় লাগছে। মনে হচ্ছে কোনো রূপকথার রাজ্যে চলে এসেছি। রিকশার আশায় চারপাশটায় একবার চোখ বুলালাম। এত রাতে রিকশা না থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ স্বাভাবিকের মধ্যেই অস্বাভাবিকভাবে দূরে একটা রিকশা দেখতে পেলাম। এত রাতে অন্তত একটা রিকশা পেলাম কথাটা ভেবেই একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। ডাক দিতেই রিকশাওয়ালা আমার কাছে চলে আসলো। রিকশাওয়ালার মুখটা দেখতে পেলাম না। মুখটা চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে। তবে অবয়ব দেখে বেশ বুঝতে পারছি লোকটা কিছুটা বয়স্ক। আমি লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘চাচা, শহরে যাবেন?’
উত্তরে শুধু লোকটা ইশারা করে রিকশায় উঠতে বলল। আমি উঠে বসলাম রিকশায়। প্রথম দিকে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদে আমি খেয়াল করলাম রিকশাটা অনেক দ্রুত চলছে। কিছুটা অবাক হলেও আমি সেটা মুখে বললাম না। কিছুক্ষণ বাদে হঠাৎ রিকশাটা দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “কি হয়েছে চাচা? থামলেন কেন?”
আমার কথা শুনে লোকটা আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যে মনে হল আমি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি। এই প্রথম আমি লক্ষ করলাম লোকটার মুখে চাদর নেই। আমার দিকে তাকাতেই লোকটার লাল টকটকে চোখ দু’টো আমার নজরে আসল। সাথে সাথে অজানা একটা ভয়ের শিহরণ বয়ে গেল আমার মেরুদণ্ড দিয়ে।
এরপরে আরও যা দেখলাম তা দেখতে কোনো দিনই আমি প্রস্তুত ছিলাম না। চাঁদের আলোয় আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম লোকটার মুখ রক্ত মাখা। ঠিক যেমন আজকের লাশটার মুখেও ছিল। রিকশা থেকে নামার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। আমার পা দু’টো যেন কয়েক টন ভারি হয়ে গিয়েছে। লোকটার দিকে আবার চোখ যেতে দেখলাম লোকটা রক্তমাখা দাঁত বের করে অদ্ভূদ ভঙ্গিতে হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে আর নিজের হাতের মাংস ছিড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। এরপর লোকটা একটানে মাথাটা ছিঁড়ে ফেলল। সাথে সাথে বডির নিচের অংশ দিয়ে গলার কাছ দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসতে লাগল। এ দৃশ্য আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম। এরপর সকালে যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি নিজেকে মর্গে আবিষ্কার করলাম। রাতে আমি তো রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলাম। তারপর আমার সাথে কী ঘটেছিল? আর আমি মর্গেই বা কেন? এ দু’টো প্রশ্নের একটারও জবাব জানা নেই আমার।
সমাপ্ত