করোনাভাইরাস থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে সময় থাকতেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। বিশ্বের বাঘা বাঘা সব অর্থনীতির দেশগুলো আক্রান্ত হওয়ার অনেক আগে থেকেই সতর্ক হয়ে গিয়েছিল। জনগনকে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছিল। আক্রান্ত হলে রোগীদের সঠিক সেবা দেয়ার জন্য ডাক্তার নার্সদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছিল। সকল সুযোগ সুবিধা সম্বলিত হাসপাতালে চিকিৎসা ও কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করেছিল।
এরপর যখন দেশগুলিতে ভাইরাসে আক্রান্ত রুগী পাওয়া শুরু হলো তখন তারা গোটা দেশকে সতর্ক করলো। এক পর্যায়ে দেশে জরুরী অবস্থা জারি করলো। নিজেরাই সারা দুনিয়া থেকে নিজেদেরকে এক প্রকার বিচ্ছিন্নই করে ফেললো। এসব কিছুই ঐ দেশগুলির সরকার করেছে তাদের দেশের নাগরিকের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য, সকলের কল্যাণের জন্য।
কিন্তু আফসোস! আমাদের দেশে কি হচ্ছে!!
আজকে একটি জাতীয় দৈনিকে পড়লাম, করোনাভাইরাস সনাক্ত করতে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৬৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে আইইডিসিআর। তাদের হাতে আর মাত্র ১৭৩২টি কিট আছে। তার মানে হলো, আইইডিসিআর আর মাত্র ১৭৩২ জন মানুষকে পরীক্ষা করে দেখতে পারবে যে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না! নমুনা সংগ্রহের জন্য নতুন কিট কবে আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনা আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ।
কি ভয়াবহ ব্যাপার!!
দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলির কি অবস্থা! তাদের প্রস্তুতি দেখার কি কেউ আছে? তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদী কি আছে? হাসপাতালগুলির ডাক্তার নার্স কি করোনা রুগীদের সেবায় প্রশিক্ষিত? তাদের কাছে করোনা সনাক্তকরণ কিট আর কবে পৌঁছাবে?
সারাদেশে একমাত্র আইইডিসিআরের একটি মাত্র ল্যাবরেটরীতেই হচ্ছে করোনা সনাক্তের পরীক্ষা!
চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বা অন্য বিভাগগুলির মানুষ কি সব রোগ সনাক্তের জন্য ঢাকায় আসবে? মানুষ সব ঢাকায় এলে ঢাকার অবস্থা কি হবে? আইইডিসিআরের একটি মাত্র ল্যাবরেটরী কি পারবে পরিস্থিতি সামাল দিতে?
আল্লাহ, আল্লাহ .. ভাবতেই পারছিনা কিছু!
সরকারী হিসেবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ (আসলে কতো আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন)। সরকার এখনি যদি করোনা রোধে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন না করে তবে আমাদের দেশে যে ঘনবসতি, আর আমরা যেমন অসচেতন তাতে (আল্লাহ না করেন) আক্রান্তের সংখ্যা এই ১০ থেকে ১০০০০-এ পৌঁছাতে সময় নেবে না দুই সপ্তাহও!
তাই সরকার বাহাদুরের নিকট বিনীত অনুরোধ করছি, যথেষ্ট হয়েছে। এবার আপনার সচেতন হোন, আমাদেরকেও সচেতন করুন। একটি উৎসবকে আনন্দমুখর করতে গিয়ে হয়তো আপনারা এদিকে অতোটা সিরিয়াস হতে পারেননি, এবার হোন। এবার দেশের মানুষের জীবন রক্ষায় মনোনিবেশ করুন। প্রয়োজনে জেলা উপজেলার কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বাদ দিয়ে হলেও করোনায় আক্রান্ত রুগীর সেবায় বিদেশ থেকে সরঞ্জামামাদী আনুন, পর্যাপ্ত পরিমানে কিট আনুন, ডাক্তার নার্সদের ভাইরাস প্রতিরোধক এপ্রোন আনুন। ফেস মাস্ক ও হ্যান্ড সেনিটাইজার কিংবা সাবান ঘরে ঘরে পৌঁছে দিন। পর্যাপ্ত এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখুন। সরকারী হাসপাতালে পাশাপাশি বেসরকারী হাসপাতালগুলোকেও ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখুন। সাসপেক্টেড রুগীদের থাকার জায়গাগুলো মানসম্মত, স্বাস্থ্যসম্মত করুন।
মনে রাখবেন, আপনাদের অবহেলা আর অদূরদর্শীতার কারনে যদি গরীব এই দেশে (আল্লাহ না করেন) করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পরে তাহলে এর খেসারত আগামী ১০০ বছরেও দেয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে।
আল্লাহ তায়ালা করোনাভাইরাস নামক এই গজব থেকে প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশকে হেফাজত করুন।