মার্ভেল কমিক্সের রঙিন পাতার টনি স্টার্ককে কে না চেনে? একদিকে তার পরিচয় যেমন বিখ্যাত বিজ্ঞানী-বিলিয়নিয়ার, অন্যদিকে লালরঙা লৌহ বর্মে আবৃত হওয়ামাত্র পৃথিবীবাসীর জন্য সে আয়রনম্যান। ফিকশন কমিক্সের পাতায় আয়রনম্যান যেমন বিজ্ঞানের সকল অসম্ভবকে তার জেটপ্যাকে ভর করে সম্ভবপর করতো, ঠিক তেমনি বাস্তবের পৃথিবীতেও কিন্তু এমন একজনের দেখা মেলে যিনি তাঁর অসাধারণ উদ্ভাবনী বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা দিয়ে নতুনভাবে রূপ দিচ্ছেন আমাদের চারপাশকে। নাম তাঁর- ইলন মাস্ক।
প্রায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পত্তির মালিক ইলন মাস্ককে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়। বিচিত্র চিন্তাধারার এই মানুষটির আপাদমস্তক জীবনধারা আমাদের অনেক বেশি অনুপ্রেরণার জোগান দেয়। অনেকের মতে হালের ইলন মাস্ক অনেকটাই সেই কেএফসির কর্নেল স্যান্ডারস কিংবা আলিবাবার জ্যাক মা এর প্রতিচ্ছবি, যারা শত ব্যর্থতা পেছনে ফেলে সাফল্যের চূড়ায় আহরণে সক্ষম হয়েছিলেন। ক্ষুদ্র কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে মঙ্গলের লাল মাটিতে প্রাণের বিকাশে পদচারণ- এত লম্বা যাত্রাপথটা কিন্তু মোটেও সুগম ছিলো না। দেখে আসা যাক প্রিটোরিয়ার ছোট্ট এক বালকের বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প-
ছোটবেলার গল্প:
দক্ষিন আফ্রিকান বাবা ও কানাডিয়ান মা এর সন্তান ইলনের পুরো নাম “ইলন রিভ মাস্ক,” জন্ম ১৯৭১ সালে, দক্ষিন আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি খুব ঝোঁক ছিল ইলনের। মাত্র নয় বছর বয়সে ঘরে বইয়ের অভাবে তিনি শেষমেষ পড়া শুরু করেন বিখ্যাত এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, যা তিনি একসময় পড়া শেষও করে ফেলেন! স্কুল জীবনে অনেকটাই চুপচাপ ছিলেন তিনি, যাকে আমরা বলি ইন্ট্রোভার্ট। একারণে স্কুল পড়ুয়াবস্থায় প্রচন্ড বুলির শিকার হতেন এবং তাকে একবার হসপিটালেও নেয়া হয়। জীবনের শুরুতেই এত এত মানসিক চাপ কিন্তু কোনোভাবেই তাঁর সাফল্যের অগ্রযাত্রাকে শিকল পড়িয়ে রাখতে পারেনি। মাত্র ১০ বছর বয়সেই সে নিজ থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এ পারদর্শিতা লাভ করেন। ১২ বছর বয়সেই তিনি ব্লাস্টার নামক একটি মজাদার ভিডিও গেম তৈরি করে ফেলেন। মজার ব্যাপার হলো, সেই ভিডিও গেমটি তিনি একটি ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করে নগদ ৫০০ মার্কিন ডলার আয় করেন!
শিক্ষাজীবন:
দক্ষিন আফ্রিকার আবশ্যিক সামরিক জীবনকে “না” বলে মাস্ক কানাডা পাড়ি দেন উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ পেনিসিলভেনিয়া থেকে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের উপর দ্বিতীয় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
বলে রাখা ভালো, স্কুল-কলেজে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কমার্স কিংবা আর্টসে পড়াশুনা করতে গেলেও অনেকের মধ্যেই সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ডে ক্যারিয়ার গড়ার সুপ্ত একটা ইচ্ছা থাকে। তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারেন ইলন মাস্ক। কেননা তিনি একসময় অর্থনীতির শিক্ষার্থী হওয়ার পরও পরবর্তীতে তিনি কিন্তু বৈজ্ঞানিক কর্মক্ষেত্রেই সফল হতে পেরেছেন।
এনার্জি ফিজিক্সের উপর পিএইচডি করার উদ্দ্যেশে মাস্ক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই তিনি ঠিক করেন যে, পিএইচডি বাদ দিয়ে তিনি ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করবেন এবং ঠিক ২দিন পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউট হন।
সফলতার শুরু:
সময়টা ছিল ইন্টারনেটের শুরুর দিকে, বিল গেটসের মতে যা,
“Internet is the new big thing”
ইন্টারনেটের অপার সম্ভাবনাই মূলত ইলন মাস্ককে জিপ টু তৈরিতে অনুপ্রেরণা দেয়, এমন একটি সফটওয়্যার যা শহরের খবরের কাগজের জন্য ইন্টারনেট গাইড হিসেবে ব্যবহার করা হতো। জিপ টু এর সিইও পদের জন্য মাস্ক আগ্রহী হলে তাঁর নিজের কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদই তাঁকে বাঁধা দেয়। ইতিমধ্যে বিখ্যাত টেক কোম্পানি কমপ্যাক জিপ টু কে অধিগ্রহণ করলে মাস্ক পকেটে পুরে নেন ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জিপ টু এর পাট চুকিয়ে মাস্ক নিয়ে আসলেন এক্স ডট কম নিয়ে। এক্স ডট কম কী জানো? আমাদের দেশে বিকাশ-ইউক্যাশের মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদানের ধারণাটাই মাস্ক এক্স ডট কমের মাধ্যমে দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন মানি ট্রান্সেকশনের মাধ্যম পেপ্যাল এ। ২০০২ সালে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইবে পেপ্যালকে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয় যা তখনকার সময়ে সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অধিগ্রহণ ছিল। পেপ্যালের ১১.৭ শতাংশ শেয়ার ইলন মাস্কের ব্যাংক একাউন্টে জমা করে প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জিপ টু ও এক্সডটকম-পেপ্যাল এর পর মাস্ক কিন্তু চাইলেই মিলিয়নিয়ারের তকমা দিয়ে অনায়েসেই বিলাসী এক জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু মাস্কের স্বপ্নটা ছিল আরও অনেক বড়, আরও অনেক সুদূরপ্রসারী।
Member
এই গল্পটি ভালো লাগলো।
Member
Yes , Its very nice story.
Member
nice.....
Member
valo lagche
Member
nice